একটি বেসরকারি আবহাওয়া পূর্বাভাস ওয়েবসাইট যা বাংলা ভাষায় আবহাওয়া পূর্বাভাস প্রদান করে থাকে একাধিক আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল, কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহ ও রাডার থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে।

Breaking News :
ঘূর্ণিঝড়

সিলেট ও রংপুর বিভাগের জন্য জীবন-রক্ষাকারী জরুরী বন্যা পূর্বাভাস আপডেট ৩: বুধবার, জুন ১৯, ২০২৪

Blog Image
Email : 665k 12k

সিলেট ও রংপুর বিভাগের জন্য জীবন-রক্ষাকারী জরুরী বন্যা পূর্বাভাস আপডেট ৩: বুধবার, জুন ১৯, ২০২৪

আজ বুধবার বিকেল ৬ টার পর থেকে আগামীকাল বৃহস্পতিবার বিকেল ৬ টার মধ্যে আবারও সিলেট, ময়মনিসংহ ও রংপুর বিভাগের জেলাগুলোর উপরে এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সর্ব-উত্তরের দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, আলিপুর দুয়ার, ও কুচবিহার জেলা, আসামের ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা ও মেঘালয় রাজ্যের উপরে ভারি থেকে খুবই ভারি বৃষ্টির প্রবল আশংকা নির্দেশ করতেছে আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেলগুলো। ফলে সিলেট বিভাগের পরে আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে রংপুর বিভাগের বিভিন্ন জেলায় বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার প্রবল আশংকা করা যাচ্ছে।


মেঘালয় পর্বতের পূর্ব-খাসি হিল পর্বত এলাকায় ২৪ ঘন্টায় রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টিপাত


ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তরের বৃষ্টিপাতের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে যে গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৯ টার পর থেকে আজ বুধবার সকাল ৯ টা পর্যন্ত অপেক্ষাকৃত বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের সর্ব-উত্তরের দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, কুচবিহার ও আলিপুর দুয়ার জেলার উপরে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৯ টার পর থেকে আজ বুধবার সকাল ৯ টা পর্যন্ত দার্জিলিং এ ২৩০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৯ টার পর থেকে আজ বুধবার সকাল ৯ টা পর্যন্ত চেরাপুঞ্জিতে ১১০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৯ টার পর থেকে আজ বুধবার সকাল ৯ টা পর্যন্ত বাংলাদেশের যে সকল জেলায় ১০০ মিলিমিটার এর বেশি পরিমাণে বৃষ্টিপাত হয়েছে তা নিম্নরূপ:

নেত্রকোনা জেলা সদর উপজেলা: ১৯৯ মিলিমিটার
কক্সবাজার জেলার কুতুবদিয়া উপজেলা: ১৭৪ মিলিমিটার
পঞ্চগড় জেলার তেতুলিয়া উপজেলা: ১৫৬ মিলিমিটার
কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলা: ১৫৪ মিলিমিটার
মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলা: ১৩৬ মিলিমিটার
নীলফামারী জেলার ডিমলা উপজেলা: ১২৯ মিলিমিটার
রংপুর জেলার সদর উপজেলা: ১২১ মিলিমিটার
সিলেট জেলার সদর উপজেলা: ১০০ মিলিমিটার

আগামী ২৪ ঘন্টায় সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার উপরে নতুন করে ২০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিচ্ছে আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেলগুলো। সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার উপরে যে পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয় তা অপেক্ষা কয়েকগুণ বেশি পরিমাণে বৃষ্টিপাত হয় মেঘালয় পর্বতের উপরে। আজ বুধবার রাতটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ সুনামগঞ্জ ও সিলেট জেলা প্রশাসনের জন্য। পানি বন্দী মানুষদেরকে উদ্ধার করার জন্য দ্রুত প্রস্তুতি নিয়ে রাখা পরামর্শ দেওয়া যাচ্ছে।

ছবি: ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ইন্টিগ্রেটেড ফোরকাস্টিং সিস্টেম নামক আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল অনুসারে আগামী ২০ শে জুন বিকেল ৬ টা পর্যন্ত সম্ভব্য মোট বৃষ্টিপাতের পরিমাণ।

আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেলগুলো থেকে প্রাপ্ত সর্বশেষ পূর্বাভাস অনুসারে আজ বুধবার রাত ১০ টা পর্যন্ত বৃষ্টির পরিমাণ অপেক্ষাকৃত কম থাকলেও রাত ৮ টার পর থেকে রংপুর বিভাগের জেলাগুলোর উপরে ও রাত ১০ টার পর থেকে ১২ টার মধ্যে ময়মনিসংহি বিভাগের শেরপুর ও নেত্রকোনা জেলা এবং সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জ ও সিলেট জেলার উপরে আবারও বৃষ্টি শুরু হওয়ার প্রবল আশংকা করা যাচ্ছে।

রংপুর বিভাগ: আজ রাত ৮ টার পর থেকে আগামীকাল সকাল ৬ টা পর্যন্ত রংপুর বিভাগের সকল জেলার উপরে তীব্র বজ্রপাত সহ ভারি থেকে খুবই ভারি বৃষ্টিপাতের প্রবল আশংকা করা যাচ্ছে। আগামী ২৪ ঘন্টায় রংপুর বিভাগের বিভিন্ন জেলায় ১০০ থেকে ২৫০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের প্রবল আশংকা করা যাচ্ছে। অপেক্ষাকৃত বেশি পরিমাণে বৃষ্টিপাতের আশংকা রয়েছে পঞ্চগড়, নীলফামারী ও কুড়িগ্রাম জেলার উপরে।

ময়মনিসংহ বিভাগ: আজ রাত ১০ থেকে ১২ টার পর থেকে শুরু হয়ে আগামীকাল সকাল ৮ টা পর্যন্ত ময়মনসিংহ বিভাগের সকল জেলার উপরে তীব্র বজ্রপাত সহ ভারি থেকে খুবই ভারি বৃষ্টিপাতের প্রবল আশংকা করা যাচ্ছে। আগামী ২৪ ঘন্টায় ময়মনিসংহ বিভাগের বিভিন্ন জেলায় ১০০ থেকে ২০০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের প্রবল আশংকা করা যাচ্ছে।

সিলেট বিভাগ: আজ রাত ১০ থেকে রাত ২ টার মধ্যে শুরু হয়ে আগামীকাল দুপুর ১২ টা পর্যন্ত সিলেট বিভাগের সকল জেলার উপরে তীব্র বজ্রপাত সহ ভারি থেকে খুবই ভারি বৃষ্টিপাতের প্রবল আশংকা করা যাচ্ছে। আগামী ২৪ ঘন্টায় সিলেট বিভাগের বিভিন্ন জেলায় ১৫০ থেকে ২৫০ মিলিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের প্রবল আশংকা করা যাচ্ছে।

মানুষদের নিরাপদ আশ্রয় গ্রহণ করার নির্দেশনা জারি করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্হা গ্রহণ করার অনুরোধ জানাচ্ছি।

২০২২ সালে সুনামগঞ্জ জেলার যে এলাকার মানুষগুলো বন্যার পানিতে ভেসে গিয়েছিল রাতের অন্ধকারে, সেই সকল এলাকার মানুষদের নিরাপদ আশ্রয় গ্রহণ করার নির্দেশনা জারি করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্হা গ্রহণ করার অনুরোধ জানাচ্ছি। আজ রাতে একই রকম ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হউক তাই দ্রুত ব্যবস্হা গ্রহণ করার জন্য সুনামগঞ্জ ও সিলেট জেলা প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি। সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর জরুরী সাহায্য প্রয়োজন হতে পারে আগামীকাল যদি আজ রাতেও মেঘালয় পর্বত এলাকায় গতকাল রাতের মতো প্রায় ৮০০ মিলিমিটার পরিমাণে বৃষ্টিপাত হয়। চলমান ভারি বৃষ্টি কমপক্ষে আরও ৩ দিন অব্যাহত থাকার প্রবল আশংকা নির্দেশ করতেছে আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেলগুলো।


ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তরের রাডার তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে যে পুরো সিলেট বিভাগের জেলাগুলো এবং মেঘালয় রাজ্যের পূর্ব খাসি পর্বত এলাকায় ভারি বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকার আশংকা করা যাচ্ছে ২২ শে জুন, ২০২৪ তারিখ পর্যন্ত। ফলে আশংকা করা যাচ্ছে যে আজ সিলেট বিভাগের নদীগুলোতে পানি দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়া অব্যাহত থাকতে পারে আগামী রবিবার পর্যন্ত। সেই সাথে নতুন করে বন্যা পানিতে ব্যাপক এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশংকা করা যাচ্ছে।


২০২৪ সালের জুন মাসে সিলেট জেলায় বৃষ্টিপাতের সর্ব-কালের রেকর্ড ভঙ্গ করার আশংকা করা যাচ্ছে।

সিলেট জেলায় জুন মাসে গড়ে বৃষ্টিপাত হয় ৮৪১ মিলিমিটার। ২০২৪ সালের প্রথম ১৮ দিনে (আজ ১৯ ই জুন সকাল ৬ টা পর্যন্ত) সিলেট জেলায় বৃষ্টিপাত হয়েছে ১৬৪৬ মিলিমিটার। সিলেট জেলায় জুন মাসে ইতিমধ্যেই গড় বৃষ্টিপাত অপেক্ষা ৯৬ % বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে; এখনও জুন মাসের ১২ দিন অবশিষ্ট রয়েছে।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুসারে গত ২৪ ঘন্টায় সিলেট জেলার জাফলং নামক স্থানে ১২৩ মিলিমিটার ও লালা-খাল নামক স্থানে ১০৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। পুরো দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ পরিমানে বৃষ্টিপাত হয়েছে রংপুর জেলার কাউনিয়া উপজেলায় ২২১ মিলিমিটার।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক পরিচালিত বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্রের তথ্য অনুসারে রংপুর বিভাগের বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে কিংবা বন্যা বিপদসীমার খুবই কাছা-কাছি উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক পরিচালিত বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্রের তথ্য অনুসারে সিলেট বিভাগের বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে কিংবা বন্যা বিপদসীমার খুবই কাছা-কাছি উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে।

 

 

ছবি: ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ইন্টিগ্রেটেড ফোরকাস্টিং সিস্টেম নামক আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল অনুসারে আগামী ২৮ শে জুন পর্যন্ত সম্ভব্য মোট বৃষ্টিপাতের পরিমাণ।

Related Post