একটি বেসরকারি আবহাওয়া পূর্বাভাস ওয়েবসাইট যা বাংলা ভাষায় আবহাওয়া পূর্বাভাস প্রদান করে থাকে একাধিক আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল, কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহ ও রাডার থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে।

ঘূর্ণিঝড়

বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির পূর্বাভাস: আপডেট ৬ (শনিবার ১৮ ই মে, ২০২৪)

Blog Image
Email : 594k 12k

বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির পূর্বাভাস: আপডেট ৬ (শনিবার ১৮ ই মে, ২০২৪)

বিশ্বের প্রধান-প্রধান আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেলগুলো হতে প্রাপ্ত সর্বশেষ পূর্বাভাসে (১৮ মে, ২০২৪) প্রায় সকল মডেলই দক্ষিণ মধ্য বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টির সম্ভাবনা নির্দেশ করতেছে আগামী ২১ শে মে থেকে ২৩ শে মে এর মধ্যে। লঘুচাপটির সৃষ্টির সাম্ভ্য স্থান হলও আন্দামান ও নিকবার দ্বীপের পশ্চিম অংশে দক্ষিণ মধ্য বঙ্গোপসাগরের উপরে। আমেরিকার গ্লোবাল ফোরকাস্ট সিস্টেম মডেল, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ইন্টিগ্রেটেড ফোরকাস্ট সিস্টেম মডেল, অস্ট্রেলিয়া, ও যুক্তরাজ্যের আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেলের সবগুলোই বঙ্গোপসাগরে একটি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির প্রবল সম্ভাবনা নির্দেশ করতেছে। সম্ভব্য এই ঘূর্ণিঝড়টির নাম হবে রেমাল। এই নামটি মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ওমানের দেওয়া।

এখানে উল্লেখ্য যে আমেরিকা ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল একই সাথে সমুদ্রের কোন স্থানে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির পূর্বাভাস দিলে সেই ঘুর্নঝড়টি সৃষ্টি সম্বন্ধে অনেকটাই নিশ্চিত হওয়া যায়। এখানে উল্লেখ্য যে গত ১০ বছরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে গে বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির সম্ভাবনা প্রথমে আমেরিকার গ্লোবাল ফোরকাস্ট সিস্টেম বা Global Forecast System (GFS) নামক আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল নির্দেশ করলেও ঘূর্ণিঝড়ের স্থল ভাগে আঘাতের স্থান ও সময় বিষয়ে অপেক্ষাকৃত বেশি সঠিক পূর্বাভাস প্রদান করে থাকে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ইন্টিগ্রেটেড ফোরকাস্টিং সিস্টেম নামক আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল বা ECMWF Integrated Forecasting System (IFS)।

যেহেতু সম্ভব্য ঘূর্ণিঝড় রেমাল স্থল ভাগে আঘাতের এখনও ৭ দিন অবশিষ্ট রয়েছে তাই সকল আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেলের স্থল ভাগে আঘাতের স্থানগুলোকে হিসাবের মধ্যে ধরলে বলা যায় যে ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যের উপকূল থেকে শুরু করে মায়ানমারের রাখাই রাজ্যের মধ্যবর্তী যে কোন এলাকার উপকূলের উপর দিয়ে স্থল ভাগে আঘাত করার সম্ভাবনা রয়েছে। ঘূর্ণিঝড় রেমালের সম্ভব্য শক্তি ও স্থল ভাগে আঘাতের স্থান সম্বন্ধে অনেক অনিশ্চয়তা রয়েছে এখন পর্যন্ত। মে মাসের ২০ তারিখেরর মধ্যে ৫০ থেকে ৭০ % নিশ্চয়তা সহকারে ঘূর্ণিঝড় রেমালের স্থল ভাগে আঘাতের স্থান ও শক্তি সম্বন্ধে জানা যাবে।

আজ ১৮ ই মে, ২০২৪ তারিখের পূর্বাভাস বিশ্লেষণ করে আশংকা করা হচ্ছে যে ঘূর্ণিঝড় রেমাল মে মাসের ২১ ও ২২ তারিখের মধ্যে লঘু চাপের শক্তি অর্জন করতে পারে। মে মাসের ২২ ও ২৩ তারিখের মধ্যে নিম্নচাপ ও গভীর নিম্নচাপের শক্তি অর্জন করার সম্ভাবনা রয়েছে। মে মাসের ২৪ তারিখে পূর্নাঙ্গ ঘূর্ণিঝড়ের শক্তি অর্জন করতে পারে। ঘূর্ণিঝড় রেমাল যদি ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশ ও ওড়িশা রাজ্যের মধ্যবর্তী উপকূলে আঘাত করে তবে স্থাল ভাগে আঘাতের সম্ভব্য সময় হবে ২৫ শে মে সন্ধ্যার পর থেকে ২৬ শে মে সন্ধ্যার মধ্যে। পক্ষান্তরে ঘূর্ণিঝড় রেমাল যদি বাংলাদেশের বরিশাল ও খুলনা বিভাগ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মধ্যবর্তী স্থানের উপকূল দিয়ে স্থলভাগে আঘাত করে তবে সম্ভব্য সময় হবে ২৬ শে মে দুপুর ১২ টার পর থেকে ২৭ শে মে সন্ধ্যার মধ্যে।

আজ ১৮ ই মে পর্যন্ত বিভিন্ন দেশের আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেলগুলো ভিন্ন-ভিন্ন স্থানের উপকূলে আঘাত করার সম্ভাবনার কথা নির্দেশ করতেছে যার প্রধান কারণ হলও আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেলগুলো ২২ থেকে ২৫ শে মে এর মধ্যে সাব-ট্রপিকাল জেট-স্ট্রিমের অবস্থান ভারত ও বাংলাদেশের আকাশের ভিন্ন-ভিন্ন স্থানে উপস্থিতি নির্দেশ করতেছে। সম্ভব্য ঘূর্ণিঝড়টি কোন উপকূলে আঘাত করবে তা পুরোপুরি নির্ভর করবে মে মাসের ২২ ও ২৩ তারিখে ভারতীয় উপমহাদেশের উপরে সাব-ট্রপিকাল জেট স্ট্রিমের অবস্থানের উপরে।

নিচে বিভিন্ন দেশের আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল হতে প্রাপ্ত ঘূর্ণিঝড় রেমাল এর স্থল ভাগে আঘাতের সম্ভব্য স্থান ও সময় এর চিত্র যোগ করা হলও।

ছবি: ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের মডেল অনুসারে সম্ভব্য ঘূর্ণিঝড়টি মে মাসের ২৬ তারিখে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের বরিশাল বিভাগের মধ্যবর্তী উপকূলের উপর দিয়ে স্হল ভাগে আঘাত করার সম্ভাবনা নির্দেশ করতেছে। (১৭ মে এর পূর্বাভাস অনুসারে)।

ছবি: আমেরিকার গ্লোবাল ফোরকাস্ট সিস্টেম মডেল অনুসারে সম্ভব্য ঘূর্ণিঝড়টি ২৫ শে মে ভারতের ওড়িশা রাজ্যের উপকুলে আঘাতের সম্ভাবনা নির্দেশ করতেছে (১৭ মে এর পূর্বাভাস অনুসারে)।

ছবি: অস্ট্রেলিয়ার আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল অনুসারে সম্ভব্য ঘূর্ণিঝড়টি ২৪ শে মে ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যের উপকুলে আঘাতের সম্ভাবনা নির্দেশ করতেছে (১৭ মে এর পূর্বাভাস অনুসারে)।


ছবি: ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মডেল অনুসারে সম্ভব্য ঘূর্ণিঝড়টি ২৫ শে মে দুপুরের পরে ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশ ও ওড়িশা রাজ্যের উপকুলে আঘাতের সম্ভাবনা নির্দেশ করতেছে (১৭ মে এর পূর্বাভাস অনুসারে)।

ছবি: যুক্তরাজ্যের আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল অনুসারে সম্ভব্য ঘূর্ণিঝড়টি ২৪ শে মে ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যের উপকুলে আঘাতের সম্ভাবনা নির্দেশ করতেছে (১৭ মে এর পূর্বাভাস অনুসারে)।

 

আমেরিকা ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের আবহাওয়া পূর্বাভাস মডেল হতে প্রাপ্ত সর্বশেষ পূর্বাভাস অনুসারে সম্ভব্য ঘূর্ণিঝড় রেমাল মে মাসের ২৫ থেকে ২৭ তারিখের মধ্যে উপকূলে আঘাত করতে পারে। ঘূর্ণিঝড় রেমাল এর প্রভাবে বাংলাদেশে উপরে বৃষ্টিপাত শুরুর সম্ভাবনা রয়েছে ২৪ শে মে থেকে যা ২৮ শে মে পর্যন্ত অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশের উপর মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে ২৫, ২৬ ও ২৭ শে মে। অপেক্ষাকৃত হালকা পরিমাণে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে মে মাসের ২৪ ও ২৮ তারিখে। মে মাসের ২৩ তারিখ থেকেই সমুদ্র উত্তাল হওয়া শুরু প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। সম্ভব্য ঘূর্ণিঝড়টির ক্ষতিকর প্রভাব সর্বনিম্ন পরিমাণে নামিয়ে আনতে দরকার পূর্ব-প্রস্তুতি

কৃষকদের জন্য পরামর্শ

সম্ভব্য ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে বাংলাদেশের বেশিভাগ জেলার উপরে বৃষ্টিপাতের প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে মে মাসের ২৪ তারিখ থেকে ২৮ তারিখের মধ্যে। ফলে বাংলাদেশের কৃষকদের অনুরোধ করবো প্রয়োজনীয় ব্যবস্হা নিয়ে রাখার জন্য। জমিতে পাকা ধান থাকলে তা কেটে মড়াই করাে জন্য। শাক-সবজির জমিত যেন ঘূর্ণিঝড়ের কারণে জামা হওয়া বৃষ্টির পানি জমে শস্যের ক্ষতি না করে।

সমুদ্র-গামী জেলেদের জন্য পূর্বাভাস

সম্ভাবনা খুবই বেশি মে মাসের ২২ তারিখ থেকে সমুদ্র উত্তাল হওয়া। সমুদ্রে মাছ ধরা জেলেরা যেন অবশ্যই মে মাসের ২৩ তারিখের মধ্যে উপকূলে ফেরত চলে আসে। মে মাসের ২৪ তারিখ থেকে সমুদ্রে অবস্থান করা কোন ভাবে নিরাপদ হবে না। মে মাসের ২৪ তারিখ থেকে ২৭ তারিখ পর্যন্ত সমুদ্র খুবই ভয়ংকর অবস্থায় থাকার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। সম??দ্র ট্রলার ডুবে প্রানহানী এড়াতে মে মাসের ২০ তারিখের পর থেকে নতুন করে গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়া বিরত থাকার জন্য অনুরোধ করা যাচ্ছে।

লবণ চাষিদের জন্য পরামর্শ

চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার উপকূলীয় এলাকার লবনচাষিদের জানানো যাচ্ছে যে মে মাসের ২৪ তারিখ থেকে বৃষ্টি শুরু হয়ে তা মে মাসের ২৮ তারিখ পর্যন্ত অব্যাহত থাকার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে মাঠে থাকা লবণ মে মাসের ২৩ তারিখের মধ্যে তুলে ফেলার প্রস্তুতি নিয়ে রাখার পরামর্শ দেওয়া যাচ্ছে।

সেন্টমার্টিন দ্বীপ-গামী পর্যটকদের জন্য ভ্রমণ সতর্কতা

মে মাসের ২৪ থেকে ২৮ তারিখ পর্যন্ত টেকনাফ-টু-সেন্টমার্টীন নৌ-পথে সমুদ্র প্রচণ্ড উত্তাল থাকার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে এই সেন্টমার্টীন দ্বীপের ভ্রমণে যাওয়া পর্যটকদের ২৪ তারিখের পূর্বে দ্বীপ ছেড়ে চলে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া যাচ্ছে।

 

উপকূলীয় মৎসচাষীদের জন্য পরামর্শ

সম্ভব্য ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রবল প্রভাব পড়ার আশংকা করা যাচ্ছে বরিশাল ও খুলনা বিভাগ ও পশ্চিমবঙ্গের উপকূলীয় এলাকার উপরে। সম্ভব্য ঘূর্ণিঝড় রোমাল ভরা-পূর্ণিমার ১ বা ২ দিন পরে উপকুলে আঘাত করার কারণে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসের আশংকা করা যাচ্ছে। মৎসচাষীদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্হা নিয়ে রাখার পরামর্শ রইলো।

Related Post