সৌরঝড়/মেরুজ্যোতি/অরোরা বোরেলি/নর্দার্ন লাইট দেখার সম্ভাবনা রয়েছে রবিবার (জুন ১, ২০২৫) রাতে
সৌর ঝড় পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করলে অরোরা বা মেরুজ্যোতির বা অরোরা দেখা যায়। উত্তর মেরুর উপর সৃষ্টি হওয়া অরোরাকে অরোরা বোরেলি ও দক্ষিন মেরুর উপর সৃষ্টি হওয়া অরোরাকে অরোরা অস্ট্রেলি নামে অবিহিত করা হয়।
আজ রবিবার সন্ধার পর থেকে মধ্য রাত পর্যন্ত আবারও শক্তিশালি সৌরঝড়/মেরুজ্যোতি/অরোরা বোরেলি/নর্দার্ন লাইট দেখতে পাওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে কানাডা ও আমেরিকা, উত্তর ইউরোপের দেশগুলো থেকে। একই ভাবে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড এর মানুষরা দেখতে পাবেন অরোরা অস্ট্রেলি/সাউদার্ন লাইট নিজ-নিজ দেশের সন্ধার পর থেকে মধ্য রাত পর্যন্ত।
কানাডা ও আমেরিকায় বসবাসরত মানুষদের জন্য (কানাডার সকল মানুষ এবং আমেরিকার মধ্য-ভাগ পর্যন্ত বসবাস করা অধিবাসীরা সবচেয়ে ভালো দেখতে পাবে) ক্যাটেগরি ৪ মাসের সৌর-ঝড় বা অরোরা দেখার অপূর্ব সুযোগ থাকবে আজ রবিবার রাতে।
আজ রাতের সৌর ঝড়ের কেপি ইনডেক্স ৭ থেকে ৮ থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে সর্বোচ্চ পরিমাণে ও অসাধারণ সুন্দর অরোরা দেখতে পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে যদি আকাশে মেঘ না থাকে। সবচেয়ে ভালো দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা সূর্য অস্ত যাওয়ার পর থেকে শুরু করে মধ্য রাত পর্যন্ত (Central Standard Time (CST)।
ছবি: ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসের ১০ তারিখে রাত ১০ টা বেজে ৩০ মিনিটের সময় কানাডার সাসকাচোয়ান রাজ্যের সাসকাটুন শহর থেকে তোলা মেরুজ্যোতির বা অরোরা বোরেলি এর ছবি।
আজ রবিবার (জুন ১, ২০২৫) সন্ধ্যার পর থেকে মেরুজ্যোতির বা অরোরা বোরেলি (বা নর্দান লাইট) প্রথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশের পূর্বাভাস দিয়েছে আমেরিকান মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। আজ সন্ধ্যার পরে পৃথিবীর উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধের ৪০ ডিগ্রী উত্তর/দক্ষিণ অক্ষাংশের দেশগুলো থেকে মেরুজ্যোতির/অরোরা বোরেলি দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি তবে ৩৫ ডিগ্রী উত্তর অক্ষাংশের দেশগুলো থেকে দেখা স্বল্প পরিমাণে দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সূর্যের মধ্যে প্রচণ্ড বিস্ফোরণের কারণে (solar coronal mass ejections (CMEs)) সূর্য থেকে নির্গত রশ্মি (সৌর ঝড় নামে পরিচিত মহাকাশ বিজ্ঞানের পরিভাষায়) পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে দি???ে অগ্রসর হচ্ছে যা আজ বৃহস্পতিবার ও আগামীকাল শুক্রবার সন্ধ্যার পরে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করবে।
আমেরিকার NATIONAL OCEANIC AND ATMOSPHERIC ADMINISTRATION কর্তৃক পরিচালিত SPACE WEATHER PREDICTION CENTER সেন্টার কর্তৃক পরিচালিত ওয়েবসাইটে Coronal Mass Ejections (CMEs সম্বন্ধে নিম্নোক্ত বর্ণনা পাওয়া যায়।
"Coronal Mass Ejections (CMEs) are large expulsions of plasma and magnetic field from the Sun’s corona. They can eject billions of tons of coronal material and carry an embedded magnetic field (frozen in flux) that is stronger than the background solar wind interplanetary magnetic field (IMF) strength. CMEs travel outward from the Sun at speeds ranging from slower than 250 kilometers per second (km/s) to as fast as near 3000 km/s. The fastest Earth-directed CMEs can reach our planet in as little as 15-18 hours. Slower CMEs can take several days to arrive. They expand in size as they propagate away from the Sun and larger CMEs can reach a size comprising nearly a quarter of the space between Earth and the Sun by the time it reaches our planet."
মেরুজ্যোতির/অরোরা বোরেলি থেকে বিভিন্ন ধরনের রং বিচ্ছুরিত হয় কেন?
সূর্য থেকে নির্গত উচ্চ গতিশক্তি ও তাপীয় শক্তি যুক্ত প্লাজমা (আয়োনাইজড পার্টিকেল যা পদার্থের চতুর্থ অবস্থা নামে পরিচিত) যখন পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে বায়ুতে অবস্থিত বিভিন্ন পদার্থের অণু-পরমাণুর সাথে সংঘর্ষ করে তখন বিভিন্ন তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের আলোক রশ্মি নির্গত হয় যার কারণে অরোরা বোরেলির সৃষ্টি হয় ও বিভিন্ন রং এর অরোরা বোরেলি দেখা যায়।
আপনি জানেন কি কেন অরোরা বা মেরুজ্যোতি থেকে বিভিন্ন রং বিচ্ছুরিত হয়ে কেন বা দেখা যায়?
অরোরা বোরেলির এর বিভিন্ন রং দেখা যায় ভূ-পৃষ্ঠ থেকে বিভিন্ন উচ্চতায় যখন সূর্য থেকে নির্গত উচ্চ গতিশক্তি ও তাপীয় শক্তি যুক্ত প্লাজমা বায়ুমণ্ডলে অবস্থিত অক্সিজেন ও নাইট্রোজেন এর চার্জড (বিভব যুক্ত) পরমাণুকে আঘাত করে।
----> লাল রং এর অরোরা বোরেলি সৃষ্টি হয় ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ২৪০ কিলোমিটার এর বেশি উচ্চতায় যখন সৌর ঝড়ের শক্তি সর্বোচ্চ পরিমাণে থাকে ও অক্সিজেন পরমাণুর পরিমাণ খুবই অল্প পরিমাণে থাকে।
-----> সবুজ রং এর অরোরা বোরেলি সৃষ্টি হয় ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ১০০ কিলোমিটার এর বেশি উচ্চতায় যখন পর্যাপ্ত পরিমাণে অক্সিজেন পরমাণুর উপস্থিতি বেশি পরিমাণে থাকে।
----> বেগুনি রং এর অরোরা বোরেলি সৃষ্টি হয় ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ১০০ কিলোমিটার এর বেশি উচ্চতায় যখন পর্যাপ্ত পরিমানে নাইট্রোজেন পরমাণুর উপস্থিতি বেশি পরিমাণে থাকে। সৌর ঝড়ের শক্তি যত বেশি পরিমাণে হয় বেগুনি রং এর গারত্ব তত বেশি পরিমাণে হয়ে থাকে।
পৃথিবীর দুই মেরু অন্বচলে কেন সৌরঝড়/মেরুজ্যোতির/অরোরা বোরেলি/নর্দান লাইট দেখতে পাওয়া যায় পৃথিবীর অন্যান্য স্হানে অপেক্ষা?
পৃথিবীর দুই মেরুর চুম্বকত্বের কারণে সূর্য থেকে নির্গত কণাগুলো পৃথিবীর উত্তর ও দক্ষিণ মেরুর দিকে আকর্ষিত হয় ফলে অরোরা পৃথিবীর দুই মেরু অঞ্চল ও ঐ দুই অঞ্চলের কাছা-কাছি দেশগুলো থেকে দেখা যায়। অরোরা সাধারণত ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ৫০ কিলোমিটার থেকে ৮০০ কিলোমিটার উপরে মহাকাশে সৃষ্টি হয়। অরোরার অসাধারণ সুন্দর দৃশ্য দেখতে পাওয়া যাবে সন্ধ্যার পর থেকে ভোর পর্যন্ত সবচেয়ে ভালো ও আকর্ষিত দৃশ্য দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।
সৌরঝড়/মেরুজ্যোতির/অরোরা এর সৌন্দর্য পূর্ণ ভাবে উপভোগ করার জন্য আপনাকে শহরের বাহিরে যেতে হবে কিছুটা কারণ শহরের বৈদ্যুতিক আলোর কারণে স্পষ্ট দেখা যায় না বিভিন্ন বর্ণের আলো। নিচে একটি মানচিত্র যোগ করে দিলাম যে চিত্র নির্দেশ করতেছে পৃথিবীর কোন স্থানের মানুষরা কোন মানের সৌর ঝড় দেখতে পাবেন। যে স্থানের আকাশ যত বেশি মেঘ মুক্ত থাকবে সেই স্থান থেকে অরোরা বোরেলি তত বেশি সুন্দর দেখা যাবে।