পাহাড়ের উপরে কেন নিয়মিত মেঘ সৃষ্টি হয় ও ভারী বৃষ্টিপাত হয়?
পাহাড়ের উপরে নিয়মিতভাবে মেঘ গঠনের প্রধান কারণ হলো একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া, যাকে বলা হয় Orographic lifting বা ভূ-আকৃতিজনিত বায়ু উত্তোলন। এই প্রক্রিয়ায়, উষ্ণ ও আর্দ্র বাতাস যখন কোনো পাহাড় বা মালভূমির ঢালের সাথে সংঘর্ষে আসে, তখন বাধাপ্রাপ্ত হয়ে সে বাতাস ওপরে উঠে যায়। উপরে উঠতে থাকায় বাতাস ঠাণ্ডা হয় এবং তার ভেতরের জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে মেঘে পরিণত হয়, যা পরবর্তীতে বৃষ্টিপাত ঘটায়।
সম্প্রতি একটি ভিডিওতে দেখা গেছে—ভূ-মধ্যসাগর ও আটলান্টিক মহাসাগরের সংযোগস্থল জিব্রাল্টার প্রণালীর কাছে, জিব্রাল্টার পাহাড়ের পাশে ঠিক এই প্রক্রিয়ায় মেঘ গঠিত হচ্ছে। একই প্রক্রিয়ায়, ভারতের মেঘালয় পর্বতের উপর নিয়মিতভাবে মেঘ তৈরি হয়। বিশেষ করে এপ্রিল-মে মাসে কালবৈশাখী মৌসুমে এবং বর্ষাকালে এই অঞ্চলে প্রবল বৃষ্টিপাত হয়।
ছবি: ভূ-মধ্যসাগর ও আটলান্টিক মহাসাগরের সংযোগস্থল জিব্রাল্টার প্রণালীর কাছে, জিব্রাল্টার পাহাড়ের উপরে সৃষ্টি হওয়া মেঘ।
মেঘালয় পর্বত বাংলাদেশের জন্য একদিকে যেমন আশীর্বাদ, অন্যদিকে তেমনি দুর্ভোগের কারণ। এই মালভূমি না থাকলে সিলেট ও কিশোরগঞ্জের হাওর অঞ্চলের অস্তিত্ব থাকতো না। এই মালভূমির ঢালের চারপাশ থেকে—হাওর এলাকা, তিস্তা নদী, ও ব্রহ্মপুত্র নদী থেকে—উদীয়মান জলীয় বাষ্প উপরে উঠে মেঘ গঠন করে।
সকালবেলায় সূর্য ওঠার পর পাহাড়ের চূড়ায় বাতাস গরম হয়ে উপরে উঠে যায়, ফলে নিচের দিকে বায়ুশূন্যতা তৈরি হয়। আশপাশের শীতল বাতাস সেই শূন্যস্থান পূরণ করতে ঢালের উপর দিয়ে উপরে উঠে যায়, এবং এই প্রবাহ সারাদিন চলতে থাকে। ফলে মেঘের ঘনত্ব বাড়ে, এবং যখন মেঘ জলীয় বাষ্পে সম্পৃক্ত হয়ে পড়ে, তখন বৃষ্টি শুরু হয়।
মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জি বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপ্রবণ এলাকা—এর প্রধান কারণ হলো এই অঞ্চল জুড়ে সারা বছরব্যাপী জলীয় বাষ্পের অবিচ্ছিন্ন সরবরাহ। কারণ, সিলেটের হাওর অঞ্চল বছরের ৮–৯ মাস পানির নিচে থাকে এবং বড় নদীগুলোর প্রবাহও স্থায়ী থাকে।
আপনি যদি সিলেটের জাফলং, কোম্পানীগঞ্জ, ভোলাগঞ্জ, বা লালাখাল ঘুরে থাকেন, তাহলে লক্ষ্য করেছেন—সীমান্তের ওপারে ভারতের পাহাড়গুলোর ওপর প্রায়ই মেঘ জমে থাকে। এই মেঘগুলো ঠিক এই "Orographic lifting" প্রক্রিয়ায়ই তৈরি হয়, যা আমাদের আঞ্চলিক আবহাওয়ার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।