বাংলাদেশে একটি বড় মানের বন্যার আশংকা করা যাচ্ছে আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে।
বাংলাদেশে বর্ষাকালের প্রকৃত একটি বন্যার আশংকা করা যাচ্ছে। সম্ভব্য এই বন্যাটি আগস্ট মাসের ১৫ তারিখের পর থেকে সেপ্টেম্বর মাসের ১০ তারিখের মধ্যে পদ্মা, যমুনা, তিস্তা নদী ও ব্রহ্মপুত্র নদের তীরবর্তী জেলাগুলোর উপরে দিয়ে অতিক্রমের আশংকা করা যাচ্ছে।
আগস্ট মাসের শেষ দিকে ও সেপ্টেম্বর শুরুর দিকে কেন বাংলাদেশে একটি বড় মানের বন্যার আশংকা করা যাচ্ছে তার সপক্ষে কিছু প্রমাণ ও যুক্তি উপস্থাপন কর হলও নিচে।
২০২৫ সালের আগস্ট মাসের অবশিষ্ট দিনগুলোতে বাংলাদেশের মানুষদের জন্য আবহাওয়া সংক্রান্ত বেশ কিছু জন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটার আশংকা করা যাচ্ছে। আগস্ট মাসের অবশিষ্ট ২০ দিনের মধ্যে বঙ্গোপসাগরে পর-পর ২ টি মৌসুমি লঘুচাপ সৃষ্টির আশংকা করা যাচ্ছে। প্রথমটি ১৩ ই আগস্ট থেকে ২২ শে আগস্ট এবং ২য় টি ২৪ শে আগস্ট থেকে ৩০ শে আগস্ট। প্রথম মৌসুমি লঘুচাপটি উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে ও ২য় মৌসুমি লঘুচাপটি দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টির আশংকা করা যাচ্ছে। প্রথম মৌসুমি লঘুচাপের কারণে গঙ্গা নদীর অববাহিকার উপরে প্রায় ১ সপ্তাহ ধরে বৃষ্টির আশংকা করা যাচ্ছে। দ্বিতীয় মৌসুমি লঘুচাপের কারণে ব্রহ্মপুত্র নদের অববাহিকার উপরে প্রায় ১ সপ্তাহ ধরে বৃষ্টির আশংকা করা যাচ্ছে। এই দুই মৌসুমি লঘুচাপের কারণে প্রায় একটানা ১৫ থেকে ২০ দিন বৃষ্টিপাতে আশংকা করা যাচ্ছে বাংলাদেশ সহ উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোর উপরে।
ছবি কৃতজ্ঞতা: বাংলাপিডিয়া।
বাংলাদেশে বর্ষাকালের প্রকৃত একটি বন্যার আশংকা করা যাচ্ছে। ২০২০ সালের পরে প্রকৃত পক্ষে দেশ-ব্যাপী বড় কোন বন্যা হয় নি। ২০২২ সালে সিলেট বিভাগে ও ২০২৪ সালে চট্রগ্রাম বিভাগে যে বন্যা হয়েছিল তা ছিল ফ্লাশ-ফ্লাড বা পাহাড়ি ঢল। বর্ষাকালের স্বাভাবিক বন্যা বলতে বুঝানো হয় ভারতের গঙ্গা নদী অববাহিকা হয়ে বাংলাদেশের পদ্মা নদীর মধ্যে প্রবেশ করে উপকূলবর্তী জেলাগুলো প্লাবিত হওয়া। একই ভাবে তিস্তা- বক্ষণপুত্র-যমুনা নদীর উপকূলবর্তী জেলাগুলোর বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হওয়া। আশংকা করা যাচ্ছে ২০২০ সালের পরে ২০২৫ সালে পদ্মা, তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদীর তীরবর্তী ২০ থেকে ৩০ টি জেলা বন্যার পানিতে প্লাবিত হওয়ার। সম্ভব্য এই বন্যাটি আগস্ট মাসের ১৫ তারিখের পর থেকে সেপ্টেম্বর মাসের ১০ তারিখের মধ্যে পদ্মা, যমুনা, তিস্তা নদী ও ব্রহ্মপুত্র নদের তীরবর্তী জেলাগুলোর উপরে দিয়ে অতিক্রমের আশংকা করা যাচ্ছে।
১৩ ই আগস্ট থেকে ২২ শে আগস্ট পর্যন্ত প্রথম মৌসুমি লঘুচাপটি সৃষ্টির সম্ভাবনা প্রায় ১০০% নিশ্চিত। দ্বিতীয় মৌসুমি লঘুচাপটি সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা খুবই বেশি।
আবহাওয়া বিজ্ঞানীরা গবেষণায় প্রমাণ পেয়েছেন যে ভারতীয় উপমহাদেশের মৌসুমি বৃষ্টিপাতের সাথে মেডেন-জুলিয়ান (Madden-Julian Oscillation বা সংক্ষেপে MJO), এল-নিনো (El-Nino), ও লা-নিনা (La-Nina) দোলন/স্পন্দন নামক তিনটি সূচক প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িত। মেডেন-জুলিয়ান চক্রটিকে প্রথমে দুইটি ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে: সক্রিয় বাষ্পীভবন বা অতিবৃষ্টি দশা ও নিষ্ক্রিয় বাষ্পীভবন বা অনাবৃষ্টি দশা। সক্রিয় বাষ্পীভবন দশা যখন সমুদ্রের কোন স্থানে অবস্থান করে তখন ঐ স্থানের সমুদ্রের পানি বেশি পরিমাণে বাষ্পায়িত হতে থাকে ফলে বেশি মেঘের সৃষ্টি হয় ও বেশি বৃষ্টিপাত ঘটায়। নিষ্ক্রিয় বাষ্পীভবন দশায় বিপরীত ঘটনা ঘটে থাকে।
গ্রীষ্মকালে মেডেন-জুলিয়ান চক্রের অবস্থান বিষুবরেখা থেকে কিছুটা উত্তর দিকে সরে যায়। মেডেন-জুলিয়ান চক্রের সক্রিয় ও নিষ্ক্রিয় বাষ্পীভবন এর অবস্থান সমুদ্রের কোন স্থানে অবস্থান করছে তার উপর ভিত্তি করে ৮ টি দশায় ভাগ করা হয়ে থাকে। মেডেন-জুলিয়ান চক্র আগস্ট মাসের ১০ তারিখ পর্যন্ত ১ নম্বর দশায় অবস্থান করতেছে। আগামী ২ সপ্তাহ এই চক্রটি ২, ৩ ও ৪ নম্বর দশায় অবস্থান করবে যার প্রভাবে আগস্ট মাসের ২৫ তারিখ পর্যন্ত বাংলাদেশ ও ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে প্রচুর বৃষ্টিপাত হবার প্রবল আশংকা করা যাচ্ছে।
আমেরিকার জাতীয় আবহাওয়া সেবা (National Weather Services) সংস্থা কর্তৃক জারিকৃত পূর্বাভাস বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে যে আগস্ট মাসের অবশিষ্ট ২০ দিন বাংলাদেশ ও পূর্ব ভারতীয় রাজ্যগুলোর উপরে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি পরিমাণে বৃষ্টির আশংকা করা যাচ্ছে।
স্বাধীনতার পরে বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বাপেক্ষা বড় ৪ টি বন্যা হয়েছে ১৯৮৮ সালে, ১৯৯৮ সালে, ২০১৬ সালে ও ২০২০ সালে। এছাড়াও গত ২০ বছরে স্বল্প সময়ের জন্য ও ছোট মানের বন্যা হয়েছিল ২০০৭ ও ২০১০ সালে। দৈবক্রমে এই বন্যা দুটিও সংগঠিত হয়েছিল ২০০৭ (দুর্বল এলনিনো অবস্থা) ও ২০১০ (শক্তিশালী এলনিনো অবস্থা) সালের এলনিনো অবস্থা শেষ হবার অব্যহিত পরের বর্ষা মৌসুমে। গত ২০২২-২০২৩ সালের শক্তিশালী এলনিনো অবস্থার অবসান হয়ে বর্তমানে নিরপেক্ষ অবস্থা বিরাজ করতেছে। ২০২৫ সালের অবশিষ্ট গ্রীষ্মকালীন সময় বর্তমান নিরপেক্ষ অবস্থা অব্যাহত থাকার শতকরা ৫৫ থেকে ৬০ ভাগ সম্ভাবনার কথা নির্দেশ করতেছে আমেরিকার আবহাওয়া পূর্বাভাষ সংস্থা। এখানে উল্লেখ্য যে ১৯৯৭-১৯৯৮ ও ২০১৫-২০১৬ সালের প্রচণ্ড শক্তিশালী এলনিনো অবস্থাও শেষ হয়ে নিরপেক্ষ অবস্থায় প্রবেশ করেছিল ১৯৯৮ ও ২০১৬ সালের মে-জুন মাসে।
বাংলাদেশে বর্ষাকালের প্রকৃত একটি বন্যার আশংকা করা যাচ্ছে। ২০২০ সালের পরে প্রকৃত পক্ষে দেশ-ব্যাপী বড় কোন বন্যা হয় নি। ২০২২ সালে সিলেট বিভাগে ও ২০২৪ সালে চট্রগ্রাম বিভাগে যে বন্যা হয়েছিল তা ছিল ফ্লাশ-ফ্লাড বা পাহাড়ি ঢল। বর্ষাকালের স্বাভাবিক বন্যা বলতে বুঝানো হয় ভারতের গঙ্গা নদী অববাহিকা হয়ে বাংলাদেশের পদ্মা নদীর মধ্যে প্রবেশ করে উপকূলবর্তী জেলাগুলো প্লাবিত হওয়া। একই ভাবে তিস্তা- বক্ষণপুত্র-যমুনা নদীর উপকূলবর্তী জেলাগুলোর বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হওয়া। আশংকা করা যাচ্ছে ২০২০ সালের পরে ২০২৫ সালে পদ্মা, তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদীর তীরবর্তী ২০ থেকে ৩০ টি জেলা বন্যার পানিতে প্লাবিত হওয়ার। সম্ভব্য এই বন্যাটি আগস্ট মাসের ১৫ তারিখের পর থেকে সেপ্টেম্বর মাসের ১০ তারিখের মধ্যে পদ্মা, যমুনা, তিস্তা নদী ও ব্রহ্মপুত্র নদের তীরবর্তী জেলাগুলোর উপরে দিয়ে অতিক্রমের আশংকা করা যাচ্ছে।
==================================
উপরোক্ত বন্যা পূর্বাভাসটি প্রস্তুত করেছেন
==================================
মোস্তফা কামাল (পলাশ)
প্রধান আবহাওয়াবিদ, আবহাওয়া ডট কম
আবহাওয়া ও জলবায়ু বিষয়ক পিএইচডি গবেষক
স্কুল অফ এনভাইরোমেন্ট এন্ড সাস্টেনিবিলিটি
সাসকাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয় , সাসকাটুন, কানাডা
Email: kamaluw@gmail.com